কুরবানী করার সঠিক নিয়ম ও সুন্নত সমুহ!!

 

কুরবাণী করার সঠিক ও সুন্নত বিষয়গুলো

কুরবাণী ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে পালন করা হয়। এটি আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতার প্রকাশ এবং সামাজিক সহানুভূতির একটি বিশেষ নির্দেশনা। কুরবাণীর সময় সঠিক নিয়ম ও সুন্নত অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কুরবাণী করার সঠিক ও সুন্নত বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:


১. কুরবাণীর সময়

কুরবাণী করার সঠিক সময় ঈদ-উল-আযহার নামাজের পর থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী তিন দিন (ইয়াউমুত-তাশরীক) পর্যন্ত। অর্থাৎ, যিলহজ্ব মাসের ১০, ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কুরবাণী করা যায়।

২. কুরবাণীর পশুর ধরন

কুরবাণীর জন্য নির্বাচিত পশু হতে পারে:

  • উট (৫ বছর পূর্ণ হতে হবে)
  • গরু/মহিষ (২ বছর পূর্ণ হতে হবে)
  • ছাগল/ভেড়া (১ বছর পূর্ণ হতে হবে, তবে ৬ মাসের ভেড়া যদি এক বছরের মত দেখায় তাহলে কুরবাণী করা যাবে)

৩. কুরবাণীর পশুর যোগ্যতা

কুরবাণীর পশু সুস্থ, সবল এবং দোষমুক্ত হতে হবে। যে পশুর নিম্নোক্ত ত্রুটি রয়েছে তা কুরবাণী করা বৈধ নয়:

  • স্পষ্ট অন্ধ
  • এক চোখে খুব কম দেখা যায় বা দেখতেই পায় না
  • অত্যন্ত পঙ্গু
  • অত্যন্ত দুর্বল বা রুগ্ন
  • কান, লেজ ইত্যাদি কাটা বা অধিকাংশ অংশ নেই

৪. কুরবাণী করার নিয়ত

কুরবাণীর আগে নিয়ত করা জরুরি। এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য করা হয়। নিয়ত অন্তরে স্থাপন করা হয়, মুখে উচ্চারণ করা আবশ্যক নয়।

৫. কুরবাণীর সুন্নত ও আদব

তাকবীর তাশরীক: ঈদ-উল-আযহার নামাজের পর থেকে ইয়াউমুত-তাশরীক এর শেষ পর্যন্ত (যিলহজ্ব ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত) প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তাকবীর তাশরীক বলা সুন্নত।

পশুর প্রতি সদয় হওয়া: কুরবাণীর পশুর প্রতি সদয় হওয়া এবং তার সাথে ভালো ব্যবহার করা সুন্নত। পশুকে কষ্ট না দিয়ে, শান্তভাবে তার সামনে পানি ও খাবার রাখা উচিত।

ধর্মীয় দোয়া পাঠ করা: কুরবাণীর সময় "বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার" বলে পশু জবাই করা সুন্নত।

৬. কুরবাণীর মাংস বিতরণ

কুরবাণীর মাংস তিন ভাগে ভাগ করা সুন্নত:

  • এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য
  • এক ভাগ আত্মীয় ও বন্ধুদের জন্য
  • এক ভাগ দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জন্য

৭. কুরবাণীর পশুর চামড়া

কুরবাণীর পশুর চামড়া বিক্রি করা বা তার মূল্য গ্রহণ করা বৈধ নয়। চামড়া দান করা বা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা উত্তম।


৮. কুরবাণীর স্থান ও পদ্ধতি

কুরবাণীর জন্য পরিষ্কার ও উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করা উচিত। পশু জবাই করার সময় তার মুখ কিবলার দিকে ফিরিয়ে রাখা এবং ধারালো ছুরি ব্যবহার করা সুন্নত। পশুকে অপ্রয়োজনীয় কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা জরুরি।

৯. নিজে কুরবাণী করা

যদি সম্ভব হয়, তবে নিজ হাতে কুরবাণী করা উত্তম। যদি নিজের পক্ষে করা সম্ভব না হয়, তবে অন্য কাউকে দিয়ে কুরবাণী করানো যেতে পারে, তবে এই সময়ে নিজের সেখানে উপস্থিত থাকা এবং তাকবীর পাঠ করা সুন্নত।

১০. ইবাদতের গুরুত্ব

কুরবাণী শুধুমাত্র একটি সামাজিক অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি একটি ইবাদত। এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করা হয়। সুতরাং, এই ইবাদতের সময় আল্লাহর ধ্যান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার

কুরবাণী ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা ঈমানের মজবুতির প্রতীক এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ। সঠিক নিয়ম ও সুন্নত অনুসরণ করে কুরবাণী করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ আমাদের সকলের কুরবাণী কবুল করুন এবং আমাদের ঈমানকে মজবুত করুন। আমিন।


Unique Code wait
Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url